এনটিআরসিএ’র আবেদন কার্যক্রম শেষের ১৫ দিন পরই যোগদান

দেশের বহু চাকরিপ্রার্থীর মনে আশার আলো জাগিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃর্পক্ষ ‘এনটিআরসিএ’ কতৃর্ক অতি সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক (১-১৪তম নিবন্ধনের) নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি দেখে নিবন্ধনধারীরা যতটা না খুশি হয়েছিলেন, তার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনের শর্ত দেখে (গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন শুরু হয়েছে)।

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের আবেদন কার্যক্রম শেষ হতে আর মাত্র ছয় দিন বাকি। ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ৫ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। সারাদেশে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার পদের বিপরীতে এসব আবেদন জমা পড়েছে। আবেদন কার্যক্রম শেষে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ ও যোগদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গত ১৮ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ১৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২ জানুয়ারি আবেদন কার্যক্রম চলবে। সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদের জন্য ১ম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রত্যাশীদের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন করতে বলা হয়। প্রাপ্ত আবেদনগুলো জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাছাইপূর্বক বিধি মোতাবেক প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন করে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে। এরপর নির্বাচিতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকে মোবাইল ফোনে ও লিখিতভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয়া হবে। এ ছাড়াও এসএমএস করে নির্বাচিত প্রার্থীকে এ তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে।

এবার নতুন নিয়ম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের শূন্য পদের সব প্রতিষ্ঠানে আবেদনের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করলেও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হচ্ছে। এতে প্রার্থীদের বিপুল অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নতুন নিয়মে ভোগান্তি বেড়েছে বলেও দাবি করছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

একাধিক আবেদনকারী অভিযোগ করেন, একটি প্রতিষ্ঠানের একটি শূন্য পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করতে হলে একজন প্রার্থীকে ১৮০ টাকা হারে ফি জমা দিতে হয়। আর নিজ উপজেলার বাইরে জেলা শহর, বিভাগীয় শহর, বা রাজধানী অথবা অন্য কোনো পছন্দের এলাকায় কোনো প্রার্থী যতগুলো শূন্য পদে আবেদন করবেন ততবার তাকে ফি দিতে হবে। এতে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

ইমরান হায়দার নামে একজন নিয়োগপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের নিবন্ধনধারী। আমার বিষয়ে পদ খালি রয়েছে তিন হাজারের বেশি। মেধাতালিকায় পিছিয়ে থাকায় চাকরি নিশ্চিত করতে হলে আমাকে অন্তত দুই হাজার প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শুধু এনটিআরসিএকেই দিতে হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর বাইরে আবেদনের জন্য আরও কিছু অর্থ খরচের বিষয় আছে। আমার পক্ষে এতো টাকা ব্যয় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন বিধান চালু করা হয়েছে। আগে যেখানে প্রার্থীরা শুধু নিজ উপজেলার শূন্য পদে আবেদন করতে পারতেন, নতুন নিয়মে এবার সেই বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতি চালু করায় আবেদন করার আগে প্রার্থী তার অবস্থান দেখতে পারছেন। যদি কোথাও ১০টি শূন্য আসন থাকে তার মধ্যে প্রার্থী মেধা তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত জেনে আবেদন করতে পারছেন। অনেকে আবার একই প্রতিষ্ঠানে একাধিক আবেদন করছেন। এতে তার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এসএম আশফাক হুসেন বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ আবেদন জমা হয়েছে। আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ আবেদন জমা হতে পারে। আবেদন কার্যক্রম শেষে পরবর্তী ১৫ দিন পর চূড়ান্ত প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দেয়া হবে। সেদিন থেকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কেউ যোগদান না করলে সে পদটি শূন্য হয়ে যাবে বলেও জানান চেয়ারম্যান।